Pages

Saturday, November 30, 2013

Jackpot _ Kabhi jo baadal barse

Kabhi jo baadal barse
Main dekhun tujhe aankhen bhar ke
Tu lage mujhe pahli barish ki dua...

Tere pahlu mein reh loon
Main khud ko pagal keh loon
Tu gham de ya khushiyaan
Seh loon sathiya...

Sunday, November 17, 2013

পরী- শিরোনামহীন


তুমি উড়িয়া উড়িয়া যাও যে চলিয়া
আমি চোখের জলেতে ভাসি
আমি অনল দহনে থাকি।
তুমি আমার পথেরও শেষ
তুমি সর্বনাশী।

আততায়ী- শিরোনামহীন


সেদিন ঝড়ের রাতে, আততায়ী খুন হয়ে গেলো প্রেমিকার হাতে
সেদিন মধ্য দুপুরে, স্বপ্নের নায়ক থমকে গেলো নগরীর পথে।

অজস্র তারার ভিড়ে, দিশেহারা রাজপথে উড়ছে আসাদের শার্ট
অব্যর্থ নিশানায় তোমার শীতল চোখে,
বেপরোয়া উত্তাপে, ভেঙ্গেচুরে আততায়ী রাত।

যদি মন কাঁদে

যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়।।

এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়।

মনে কী দ্বিধা


মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে সে দিন ভরা সাঁঝে,
যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি
কী কথা ছিল যে মনে।।

ওগো তোরা কে যাবি পারে


ওগো, তোরা কে যাবি পারে।
আমি তরী নিয়ে বসে আছি নদীকিনারে।।
ও পারেতে উপবনে
কত খেলা কত জনে,
এ পারেতে ধু ধু মরু বারি বিনারে।।

শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা


শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।
কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।
উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ
দমকত বিদ্যুত, পথতরু লুন্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ।

এসো আমার ঘরে


এসো আমার ঘরে।
বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তর।।
স্বপনদুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে
মুগ্ধ এ চোখে।

ও যে মানে না মানা


ও যে মানে না মানা।
আঁখি ফিরাইলে বলে, না, না, না।
যত বলি নাই রাতি মলিন হয়েছে বাতি
মুখপানে চেয়ে বলে, না, না, না।

আমার যাবার বেলায়


আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে
ভোরের আলো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে।।

বাদলপ্রাতের উদাস পাখি ওঠে ডাকি।
বনের গোপন শাখে শাখে, পিছু ডাকে।।

ও চাঁদ চোখের জলের


ও চাঁদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার দুখের পারাবারে,
হল কানায় কানায় কানাকানি এই পারে ওই পার।।

আমার তরী ছিল চেনার কূলে, বাঁধন যে তার গেল খুলে;
তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেল কোন্‌ অচেনার ধারে।।

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে


যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে।।

যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে।।

নূপুর বেজে যায় রিনিরিনি


নূপুর বেজে যায় রিনিরিনি।
আমার মন কয়, চিনি চিন।।

গন্ধ রেখে যায় মধুবায়ে মাধবীবিতানের ছায়ে ছায়ে,
ধরণী শিহরায় পায়ে পায়ে, কলসে কঙ্কণে কিনিকিন।।

আমার বেলা যে যায়


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।

সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি


সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত
স্বর্ণে রত্নে শোভন লোভন জানি বর্ণে বর্ণে রচিত।।
খড়্গ তোমার আরো মনোহর লাগে বাঁকা বিদ্যুতে আঁকা সে,
গরুড়ের পাখা রক্ত রবির রাগে যেন গো অস্ত-আকাশে।

না যেয়ো না


না, যেয়ো না, যেয়ো নাকো।
মিলনপিয়াসী মোরা-- কথা রাখো, কথা রাখো।।
আজো বকুল আপনহারা হায় রে, ফুল ফোটানো হয় নি সারা,
সাজি ভরে নি--
পথিক ওগো, থাকো থাকো

Friday, November 15, 2013

যেতে দাও যেতে দাও


যেতে দাও যেতে দাও গেল যারা।
তুমি যেয়ো না, তুমি যেয়ো না,
আমার বাদলের গান হয় নি সারা।।

কুটিরে কুটিরে বন্ধ দ্বার, নিভৃত রজনী অন্ধকার,
বনের অঞ্চল কাঁপে চঞ্চল-- অধীর সমীর তন্দ্রাহারা।।

দীপ নিবেছে নিবুক নাকো, আঁধারে তব পরশ রাখো।
বাজুক কাঁকন তোমার হাতে আমার গানের তালের সাথে,
যেমন নদীর ছলোছলো জলে ঝরে ঝরোঝরো শ্রাবণধারা।।

কী বেদনা মোর জানো


কী বেদনা মোর জানো সে কি তুমি জানো
ওগো মিতা, মোর অনেক দূরের মিতা।
আজি এ নিবিড়তিমির যামিনী বিদ্যুতসচকিতা।।
বাদাল-বাতাস ব্যেপে হৃদয় উঠিছে কেঁপে
ওগো সে কি তুমি জানো।

উৎসুক এই দুখজাগরণ এ কি হবে হায় বৃথা
ওগো মিতা, মোর অনেক দূরের মিতা,
আমার ভবনদ্বারে রোপণ করিলে যারে
সজল হাওয়ার করুণ পরশে সে মালতী বিকশিতা।।
ওগো সে কি তুমি জানো।

তুমি যার সুর দিয়েছিলে বাঁধি
মোর কোলে আজ উঠিছে সে কাঁদি ওগো সে কি জানো
সেই-যে তোমার বীণা সে কি বিস্মৃতা।।

এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে


এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে
দেখা পেলেম ফাল্গুনে।।

বালক বীরের বেশে তুমি করলে বিশ্বজয়
এ কী গো বিস্ময়।
অবাক আমি তরুণ গলার গান শুনে।।

গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী,
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী।
তরুণ হাসির আড়ালে কোন্‌ আগুন ঢাকা রয়
এ কী গো বিস্ময়।
অস্ত্র তোমার গোপন রাখ কোন্‌ তূণে।।

বিদায় করেছ যারে নয়ন-জলে


বিদায় করেছ যারে নয়ন-জলে,
এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে গো।।

আজি মধু সমীরণে নিশীথে কুসুমবনে
তারে কি পড়েছে মনে বকুলতলে।।

সে দিনও তো মধুনিশি প্রাণে গিয়েছিল মিশি,
মুকুলিত দশ দিশি কুসুমদলে।
দুটি সোহাগের বাণী যদি হত কানাকানি
যদি ঐ মালাখানি পরাতে গলে।

এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে গো
মধুনিশি পূর্ণিমার ফিরে আসে বার বার,
সে জন ফেরে না আর যে গেছে চলে
ছিল তিথি অনকূল, শুধু নিমেষের ভুল
চিরদিন তৃষাকুল পরান জ্বলে।
এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে গো।।

চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে


চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে।
অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহিরে।।

ধরায় যখন দাও না ধরা হৃদয় তখন তোমায় ভরা,
এখন তোমার আপন আলোয় তোমায় চাহিরে।।

তোমায় নিয়ে খেলেছিলেম খেলার ঘরেতে।
খেলার পুতুল ভেঙে গেছে প্রলয় ঝড়েতে।
থাক তবে সেই কেবল খেলা, হোক-না এখন প্রাণের মেলা
তারের বীণা ভাঙল, হৃদয়-বীণায় গাহি রে।।

আমার মন কেমন করে


আমার মন কেমন করে
কে জানে, কে জানে, কে জানে কাহার তর।।

অলখ পথের পাখি গেল ডাকি,
গেল ডাকি সুদূর দিগন্তরে
ভাবনাকে মোর ধাওয়ায়
সাগরপারের হাওয়ায় হাওয়ায় হাওয়ায়।

স্বপনবলাকা মেলেছে পাখা,
আমায় বেঁধেছে কে সোনার পিঞ্জরে ঘরে।।

এই উদাসী হাওয়ার


এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে,
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি, তোমার চরণে দিয়েছি
লহো লহো করুণ করে।।

যখন যাব চলে ওরা ফুটবে তোমার কোলে,
তোমার মালা গাঁথার আঙুলগুলি মধুর বেদনভরে
যেন আমায় স্মরণ করে।।

বউ কথা কও তন্দ্রাহারা বিফল ব্যথায় ডাক দিয়ে হয় সারা
আজি বিভোর রাতে।
দুজনের কানাকানি কথা দুজনের মিলনবিহ্বলতা,
জ্যোৎস্নাধারায় যায় ভেসে যায় দোলের পূর্ণিমাতে।
এই আভাসগুলি পড়বে মালায় গাঁথা কালকে দিনের তরে
তোমার অলস দ্বিপ্রহরে।।

পুরানো সেই দিনের কথা


পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।

আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।

মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।

হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়।।

ফাগুন হাওয়ায়


ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ।।

তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
তোমার ঝাউয়ের দোলে
মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান।।

পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাপতির পাখা
আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন-স্বপন-মাখা।
তোমার চাঁদের আলোয়
মিলায় আমার দুঃখসুখের সকল অবসান।।

তোমার সুর শুনায়ে


তোমার সুর শুনায়ে যে ঘুম ভাঙাও সে ঘুম আমার রমণীয়
জাগরণের সঙ্গিনী সে, তারে তোমার পরশ দিয়ো।।

অন্তরে তার গভীর ক্ষুধা, গোপনে চায় আলোকসুধা,
আমার রাতের বুকে সে যে তোমার প্রাতের আপন প্রিয়।।

তারি লাগি আকাশ রাঙা আঁধার-ভাঙা অরুণরাগে,
তারি লাগি পাখির গানে নবীন আশার আলাপ জাগে।
নীরব তোমার চরণধ্বনি শুনায় তারে আগমনী,
সন্ধ্যবেলার কুঁড়ি তারে সকালবেলায় তুলে নিয়ো।।

বিপদে মোরে রক্ষা করো


বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।।
সহায় মোর না যদি জুটে নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ এ নহে মোর প্রার্থনা
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
নম্রশিরে সুখের দিনে তোমারি মুখ লইব চিনে
দুখের রাতে নিখিল ধরা যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।

ও যে মানে না মানা


ও যে মানে না মানা।
আঁখি ফিরাইলে বলে, না, না, না।
যত বলি নাই রাতি মলিন হয়েছে বাতি
মুখপানে চেয়ে বলে, না, না, না।

বিধুর বিকল হয়ে খেপা পবনে
ফাগুন করিছে হাহা ফুলের বনে।
আমি যত বলি তবে এবার যে যেতে হবে
দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে, না, না, না।

কেন চোখের জলে ভিজিয়ে


কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না শুকনো ধুলো যত!
কে জানিত আসবে তুমি গো অনাহূতের মতো।।
তুমি পার হয়ে এসেছ মরু, নাই যে সেথায় ছায়াতরু
পথের দুঃখ দিলেম তোমায় গো এমন ভাগ্যহত।।

তখন আলসেতে বসে ছিলেম আমি আপন ঘরের ছায়ে,
জানি নাই যে তোমায় কত ব্যথা বাজবে পায়ে পায়ে।
তবু ওই বেদনা আমার বুকে বেজেছিল গোপন দুখে
দাগ দিয়েছে মর্মে আমার গো গভীর হৃদয়ক্ষত।।

আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে


আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।।

যাব না গো যাব না যে, রইনু পড়ে ঘরের মাঝে
এই নিরালায় রব আপন কোণে।
যাব না এই মাতাল সমীরণে।।

আমার এ ঘর বহু যতন ক'রে
ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।
আমারে যে জাগতে হবে, কী জানি সে আসবে কবে
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।।

আমি কান পেতে রই


আমি কান পেতে রই ও আমার আপন হৃদয়গহন-দ্বারে বারে বারে
কোন্‌ গোপনবাসীর কান্নাহাসির গোপন কথা শুনিবারে-- বারে বারে।।
ভ্রমর সেথা হয় বিবাগি নিভৃত নীল পদ্ম লাগি রে,
কোন রাতের পাখি গায় একাকী সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে বারে বারে।।

কে সে মোর কেই বা জানে, কিছু তার দেখি আভা।
কিছু পাই অনুমানে, কিছু তার বুঝি না বা।
মাঝে মাঝে তার বারতা আমার ভাষায় পায় কি কথা রে,
ও সে আমায় জানি পাঠায় বাণী গানের তানে লুকিয়ে তারে বারে বারে।।

প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে


প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।
তব ভুবনে তব ভবনে
মোরে আরো আরো আরো দাও স্থান।।

আরো আলো আরো আলো
এই নয়নে, প্রভু, ঢালো।
সুরে সুরে বাঁশি পুরে
তুমি আরো আরো আরো দাও তান।।

আরো বেদনা আরো বেদনা,
প্রভু, দাও মোরে আরো চেতনা।
দ্বার ছুটায়ে বাধা টুটায়ে
মোরে করো ত্রাণ মোরে করো ত্রাণ।।

আরো প্রেমে আরো প্রেমে
মোর আমি ডুবে যাক নেমে।
সুধাধারে আপনারে
তুমি আরো আরো আরো করো দান।।

সে যে পাশে এসে বসেছিল


সে যে পাশে এসে বসেছিল
তবু জাগি নি।
কী ঘুম তোরে পেয়েছিল হতভাগিনী।
এসেছিল নীরব রাতে
বীণাখানি ছিল হাতে,
স্বপনমাঝে বাজিয়ে গেল
গভীর রাগিণী।

 জেগে দেখি দখিন-হাওয়া
পাগল করিয়া
গন্ধ তাহার ভেসে বেড়ায়
আঁধার ভরিয়া।
কেন আমার রজনী যায়
কাছে পেয়ে কাছে না পায়
কেন গো তার মালার পরশ
বুকে লাগি নি।

সখী ভাবনা কাহারে বলে


সখী, ভাবনা কাহারে বলে, সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ভালোবাসা ভালোবাসা
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ।

আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল সকলই আমার মতো।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।
আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে
সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ ।
প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।।

নিশিদিন ভরসা রাখিস


নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে।
যদি পণ করে থাকিস সে পণ তোমার রবেই রবে।
ওরে মন, হবেই হবে।।

পাষাণসমান আছে পড়ে, প্রাণ পেয়ে সে উঠবে ওরে,
আছে যারা বোবার মতন তারাও কথা কবেই কবে।।

সময় হল, সময় হল-- যে যার আপন বোঝা তোলো রে
দুঃখ যদি মাথায় ধরিস সে দুঃখ তোর সবেই সবে।
ঘণ্টা যখন উঠবে বেজে দেখবি সবাই আসবে সেজে
এক সাথে সব যাত্রী যত একই রাস্তা লবেই লবে।।

চক্ষে আমার তৃষ্ণা


চক্ষে আমার তৃষ্ণা, ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে।
আমি বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন, সন্তাপে প্রাণ যায় যে পুড়ে।।

ঝড় উঠেছে তপ্ত হাওয়ায়, মনকে সুদূর শূন্যে ধাওয়ায়
অবগুণ্ঠন যায় যে উড়ে।।

যে-ফুল কানন করত আলো
কালো হয়ে সে শুকাল।
ঝরনারে কে দিল বাধা নিষ্ঠুর পাষাণে বাঁধা।।

যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে


যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে
জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে।।

সব যে হয়ে গেল কালো, নিবে গেল দীপের আলো,
আকাশ-পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে?
অন্ধকারে রইনু পড়ে স্বপন মানি।
ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা তাই কি জানি!

সকালবেলা চেয়ে দেখি, দাঁড়িয়ে আছ তুমি এ কি,
ঘর-ভরা মোর শূন্যতারই বুকের পরে।।

কেহ কারো মন বুঝে না


কেহ কারো মন বুঝে না, কাছে এসে সরে যায়।
সোহাগের হাসিটি কেন চোখের জলে মরে যায়।।

বাতাস যখন কেঁদে গেল প্রাণ খুলে ফুল ফুটিল না,
সাঁঝের বেলা একাকিনী কেন রে ফুল ঝরে যায়।।

মুখের পানে চেয়ে দেখো, আঁখিতে মিলাও আঁখি
মধুর প্রাণের কথা প্রাণেতে রেখো না ঢাকি।
এ রজনী রহিবে না, আর কথা হইবে না
প্রভাতে রহিবে শুধু হৃদয়ের হায়-হায়।।

আমার যেতে সরে না মন


আমার যেতে সরে না মন
তোমার দুয়ার পারায়ে আমি যাই যে হারায়ে
অতল বিরহে নিমগ।।

চলিতে চলিতে পথে সকলই দেখি যেন মিছে,
নিখিল ভুবন পিছে ডাকে অনুক্ষ।।

আমার মনে কেবলই বাজে
তোমায় কিছু দেওয়া হল না যে।
যবে চলে যাই পদে পদে বাধা পাই,
ফিরে ফিরে আসি অকারণ।।

কখন দিলে পরায়ে স্বপনে বরণমালা


কখন দিলে পরায়ে স্বপনে বরণমালা,
ব্যথার মালা।।

প্রভাতে দেখি জেগে অরুণ মেঘে
বিদায়বাঁশরি বাজে অশ্রু-গালা
গোপনে এসে গেলে, দেখি নাই আঁখি মেলে
আঁধারে দুঃখডোরে বাঁধিলে মোরে,
ভূষণ পরালে বিরহবেদন-ঢালা।

মেঘের কোলে রোদ হেসেছে


মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি।
আহা, হাহা, হা।
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি।
আহা, হাহা, হা।।

কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন্‌ বনে যাই,
কোন্‌ মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি।
আহা, হাহা, হা।।

কেয়া-পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে
তালদিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে।
রাখাল ছেলের সঙ্গে ধেনু চরাব আজ বাজিয়ে বেণু,
মাখব গায়ে ফুলের রেণু চাঁপার বনে লুটি।
আহা, হাহা, হা।।

জাগরণে যায় বিভাবরী


জাগরণে যায় বিভাবরী
আঁখি হতে ঘুম নিল হরি মরি মরি।।

যার লাগি ফিরি একা একা-- আঁখি পিপাসিত, নাহি দেখা,
তারি বাঁশি ওগো তারি বাঁশি তারি বাঁশি বাজে হিয়া ভরি মরি মরি।।

বাণী নাহি, তবু কানে কানে কী যে শুনি তাহা কেবা জানে।
এই হিয়াভরা বেদনাতে, বারি-ছলোছলো আঁখিপাতে,
ছায়া দোলে তারি ছায়া দোলে ছায়া দোলে দিবানিশি ধরি মরি মরি।।

আমার মন বলে চাই


আমার মন বলে, চাই চাই, চাই গো
যারে নাহি পাই গো
সকল পাওয়ার মাঝে আমার মনে বেদন বাজে
নাই, নাই নাই গো

হারিয়ে যেতে হবে,
আমায় ফিরিয়ে পাব তবে,
সন্ধ্যাতারা যায় যে চলে ভোরের তারায় জাগবে বলে
বলে সে, যা ই যা ই যাই গো

ভরা থাক স্মৃতিসুধায়


ভরা থাক্‌ স্মৃতিসুধায় বিদায়ের পাত্রখানি।
মিলনের উৎসবে তায় ফিরায়ে দিয়ো আন।।

বিষাদের অশ্রুজলে নীরবের মর্মতলে
গোপনে উঠুক ফলে হৃদয়ের নূতন বাণী।।

যে পথে যেতে হবে সে পথে তুমি একা
নয়নে আঁধার রবে, ধেয়ানে আলোকরেখা।
সারা দিন সঙ্গোপনে সুধারস ঢালবে মনে
পরানের পদ্মবনে বিরহের বীণাপাণি।।

আয় তবে সহচরী


আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি
নাচিবি ঘিরি ঘিরি, গাহিবি গান।
আন্‌ তবে বীণা
সপ্তম সুরে বাঁধ্‌ তবে তান।।

পাশরিব ভাবনা, পাশরিব যাতনা,
রাখিব প্রমোদে ভরি দিবানিশি মনপ্রাণ।
আন্‌ তবে বীণা
সপ্তম সুরে বাঁধ্‌ তবে তা।।

ঢালো ঢালো শশধর, ঢালো ঢালো জোছনা।
সমীরণ, বহে যা রে ফুলে ফুলে ঢলি ঢলি।
উলসিত তটিনী,
উথলিত গীতরবে খুলে দে রে মনপ্রাণ।।

সেই ভালো সেই ভালো


সেই ভালো সেই ভালো, আমারে না হয় না জান।
দূরে গিয়ে নয় দু:খ দেবে, কাছে কেন লাজে লাজানো।।
মোর বসন্তে লেগেছে তো সুর, বেণুবনছায়া হয়েছে মধুর
থাক্‌-না এমনি গন্ধে-বিধুর মিলনকুঞ্জ সাজানো।।
গোপনে দেখেছি তোমার ব্যাকুল নয়নে ভাবের খেলা।
উতল আঁচল, এলোথেলো চুল, দেখেছি ঝড়ের বেলা।
তোমাতে আমাতে হয় নি যে কথা মর্মে আমার আছে সে বারতা
না-বলা বাণীর নিয়ে আকুলতা আমার বাঁশিটি বাজানো।।

আমার মল্লিকা বনে


আমার মল্লিকা বনে যখন প্রথম ধরেছে কলি
তোমার লাগিয়া তখনি, বন্ধু, বেঁধেছিনু অঞ্জল।।
তখনো কুহেলীজালে,
সখা, তরুণী উষার ভালে
শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি।।
এখনো বনের গান, বন্ধু হয় নি তো অবসান
তবু এখনি যাবে কি চলি।
ও মোর করুণ বল্লিকা,
ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা
ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি।।

কাল রাতের বেলা গান এল মোর মনে


কাল রাতের বেলা গান এল মোর মনে,
তখন তুমি ছিলে না মোর সনে।।
যে কথাটি বলব তোমায় ব'লে কাটল জীবন নীরব চোখের জলে
সেই কথাটি সুরের হোমানলে উঠল জ্বলে একটি আঁধার ক্ষণে
তখন তুমি ছিলে না মোর সনে।।
ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে
সেই কথাটি তোমায় যাব বলে
ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে পাখির গানে আকাশ গেল পুরে,
সেই কথাটি লাগল না সেই সুরে যতই প্রয়াস করি পরানপণে
যখন তুমি আছ আমার সনে।।

যে ছিল আমার স্বপনচারিণী


যে ছিল আমার স্বপনচারিণী
তারে বুঝিতে পারি নি।
দিন চলে গেছে খুঁজিতে খুঁজিত।।

শুভক্ষণে কাছে ডাকিলে,
লজ্জা আমার ঢাকিলে গো,
তোমারে সহজে পেরেছি বুঝিতে।।

কে মোরে ফিরাবে অনাদরে,
কে মোরে ডাকিবে কাছে,
কাহার প্রেমের বেদনায় আমার মূল্য আছে,
এ নিরন্তর সংশয়ে হায় পারি নে যুঝিতে
আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে।।

মনে রবে কি না


মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই।।
চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি
তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই
তাই অকারণে গান গাই।।

ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে।
ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,
যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই
তাই অকারণে গান গাই।।

তুমি যে সুরের আগুন


তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,
এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে।
যত সব মরা গাছের ডালে ডালে
নাচে আগুন তালে তালে রে,
আকাশে হাত তোলে সে কার পানে।।

আঁধারের তারা যত অবাক্‌ হয়ে রয় চেয়ে,
কোথাকার পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে।
নিশীথের বুকের মাঝে এই-যে অমল
উঠল ফুটে স্বর্ণকমল,
আগুনের কী গুণ আছে কে জানে।।

কোন খেলা যে খেলব কখন


কোন্‌ খেলা যে খেলব কখন্‌ ভাবি বসে সেই কথাটাই
তোমার আপন খেলার সাথি করো, তা হলে আর ভাবনা তো নাই।।
শিশির-ভেজা সকালবেলা আজ কি তোমার ছুটির খেলা
বর্ষণহীন মেঘের মেলা তার সনে মোর মনকে ভাসাই।।
তোমার নিঠুর খেলা খেলবে যে দিন বাজবে সে দিন ভীষণ ভেরী
ঘনাবে মেঘ, আঁধার হবে, কাঁদবে হাওয়া আকাশ ঘেরি।
সে দিন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে
অকাতরে পরানটাকে প্রলয়দোলায় দোলাতে চাই।।

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে


আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন
আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন।।
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন।।
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন।।

যেতে যেতে একলা পথে


যেতে যেতে একলা পথে
নিবেছে মোর বাতি।
ঝড় এসেছে, ওরে, এবার
ঝড়কে পেলেম সাথি।
আকাশ-কোণে সর্বনেশে
ক্ষণে ক্ষণে উঠছে হেসে,
প্রলয় আমার কেশে বেশে
করছে মাতামাতি।
যে পথ দিয়ে যেতেছিলেম
ভুলিয়ে দিল তারে,
আবার কোথা চলতে হবে
গভীর অন্ধকারে।
বুঝি বা এই বজ্ররবে
নূতন পথের বার্তা কবে,
কোন্‌ পুরীতে গিয়ে তবে
প্রভাত হবে রাতি।

পুরানো সেই দিনের কথা


পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়।।

তোমায় গান শোনাব


তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক'
ওগো দুখজাগানিয়া।।

এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া।।

আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
আমার পরশ করে প্রাণ সুধায় ভরে
তুমি যাও যে সরে
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুঃখজাগানিয়া।।

হে ক্ষণিকের অথিতি

হে ক্ষণিকের অথিতি,
এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া
ঝরা শেফালির পথ চাহিয়া।।
কোন অমরার বিরহিণীরে চাহনি ফিরে,
কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া।।
ওগো অকরুণ, কী মায়া জানো,
মিলনছলে বিরহ আনো।
চলেছো পথিক আলোকযানে আধার-পানে
মনভুলানো মোহনতানে গান গাহিয়া।।

মেঘ বলেছে যাব যাব


মেঘ বলেছে যাব যাব, রাত বলেছে যাই,

সাগর বলে কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই

দুঃখ বলে রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে,

আমি বলে মিলাই আমি আর কিছু না চাই

ভুবন বলে তোমার তরে আছে বরণমালা,

গগন বলে তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা

প্রেম বলে যে যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে,

মরণ বলে আমি তোমার জীবনতরী বাই

ও আমার দেশের মাটি


ও আমার দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।।
তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,
তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,
তোমার ওই শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা।।
ওগো মা, তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে।
তোমার 'পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে।
তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে,
তুমি শীতল জলে জুড়াইলে,তুমি যে সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা।।
ও মা, অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা
তবু জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা।
আমার জনম গেল বৃথা কাজে,
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা।।

সহে না যাতনা


সহে না যাতনা
দিবস গণিয়া গণিয়া বিরলে
নিশিদিন বসে আছি শুধু পথপানে চেয়ে
সখা হে, এলে না।
সহে না যাতনা।।
দিন যায়, রাত যায়, সব যায়
আমি বসে হায়।
দেহে বল নাই, চোখে ঘুম নাই
শুকায়ে গিয়াছে আঁখিজল।
একে একে সব আশা ঝ'রে ঝ'রে প'ড়ে যায়
সহে না যাতনা।।

বড়ো আশা করে এসেছি গো


বড়ো আশা ক'রে এসেছি গো, কাছে ডেকে লও,
ফিরায়ো না জননী।।
দীনহীনে কেহ চাহে না, তুমি তারে রাখিবে জানি গো।
আর আমি-যে কিছু চাহি নে, চরণতলে বসে থাকিব।
আর আমি-যে কিছু চাহি নে, জননী বলে শুধু ডাকিব।
তুমি না রাখিলে, গৃহ আর পাইব কোথা, কেঁদে কেঁদে কোথা বেড়াব
ওই-যে হেরি তমসঘনঘোরা গহন রজনী।।

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে


তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি
আমি ডুবতে রাজি আছি আমি ডুবতে রাজি আছি।।
সকাল আমার গেল মিছে, বিকেল যে যায় তারি পিছে গো
রেখো না আর, বেঁধো না আর কূলের কাছাকাছি।।
মাঝির লাগি আছি জাগি সকল রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার ভ্রূকুটিতে
দাও ছেড়ে দাও, ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি।।

মনে রবে কি না রবে আমারে


মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই।।
চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি
তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই
তাই অকারণে গান গাই।।
ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে।
ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,
যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই
তাই অকারণে গান গাই।।

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে


যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, 
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি, আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।।